ড. মু. আমান উদ্দীন মুজাহিদ : :
পাহাড়-অরণ্য-হ্রদঘেরা সবুজ সমারোহের প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর বাংলাদেশের এক-দশমাংশ এলাকা পার্বত্য চট্টগ্রাম; যা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত। অপরূপ সৌন্দর্যের এ জনপদ অশান্তির আগুনে জ্বলছে প্রতিদিন। পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে চলমান সংঘাতে খুন, অপহরণের ঘটনা আজ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকা- পার্বত্য চট্টগ্রামে আজ মহামারী আকার ধারণ করেছে। অন্যদিকে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সম্পাদিত তথাকথিত শান্তিচুক্তির আড়ালে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালিদের নিজ ভূমিতে পরবাসী করে দেওয়া হয়েছে। উপজাতীয় তথা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর জন্য যাবতীয় ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী করা হয়েছে।
দীর্ঘকাল থেকে বসবাসকৃত বাঙালি অধিবাসীদের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে। সাধারণত উপজাতি কোটা বিদ্যমান থাকায় তারা শিক্ষা, চাকরিতে এমনিতেই শীর্ষ স্থান দখল করে আছে। কথিত শান্তিচুক্তির পরে রাষ্ট্রীয় সীমাহীন সুযোগ-সুবিধার কারণে উপজাতীয়রা আজ সর্বক্ষেত্রে প্রধান্য বিস্তার করে আছে। অন্যদিকে শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সাক্ষরতার হার বিবেচনায় দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাস করা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত এক সম্প্রদায়ের নাম হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালি সম্প্রদায়।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের এ প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। সাম্য মানবিকতা মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করে সকল সম্প্রদায়ের সাথে সমান আচরণই ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম মূলনীতি। অথচ আজ স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের এক-দশমাংশ এলাকা নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি সমাজ রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের শিকার। তাই আজ একটি অনগ্রসর সম্প্রদায়রূপে তাদের পরিচয় ক্রমশ দৃঢ় হচ্ছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর পরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাহাড়ি উপজাতিদের রক্তাক্ত সংঘাত পরিহার করে বাঙালিদের সাথে মিলেমিশে দেশ গড়ার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। দুঃখজনক হলেও সত্য বঙ্গবন্ধুর এ আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে তৎকালীন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে হাতে অস্ত্র তুলে নিতে বলেছিলেন। শুরু হলো সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী সংঘাত। প্রতিবেশী ভারতের প্রত্যক্ষ মদদে হাজার হাজার উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের ট্রেনিং করিয়ে, অস্ত্র গোলা বারুদ দিয়ে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি নিধনের নৃশংস তা-বতা শুরু করা হলো। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী তৎকালীন বিডিআর জওয়ানদের জীবনদানসহ সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষা ও দেশরক্ষার ইস্পাত কঠিন দৃঢ় মনোবলের পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও বাঙালি নিধনের ভয়াভহ নির্মমতা থেমে থাকেনি।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি বসতি স্থাপনের অনুমতি প্রদান করেন; যা শহীদ জিয়ার দূরদর্শিতার পরিচায়ক হিসেবে ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে। সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদে তিনটি পার্বত্য জেলার জন্য বিপুল ক্ষমতাধর তিনটি আলাদা স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠন সংক্রান্ত আইন পাস হয়। প্রায় অর্ধেক বাঙালি জনগোষ্ঠীর স্বার্থকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে উপজাতীয়দের একমাত্র ক্ষমতার অধিকারী করেও এরশাদ তাদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। উপরন্তু তথাকথিত শান্তিবাহিনী নামক সন্ত্রাসীরা বাঙালি হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। রাস্তাঘাট, হাট-বাজারে প্রকাশ্যে দিবালোকে বাঙালিদের গুলী করে হত্যা করে। রাতের আঁধারে বাঙালিদের ঘরবাড়িতে আগুন জালিয়ে দিয়ে ঘুমন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা ইত্যাদি লোমহর্ষক ঘটনা ঘটতে থাকে।
১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করার পর শান্তিবাহিনীর সাথে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তথাকথিত শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরতদের অর্ধেক বাঙালি হওয়া সত্ত্বেও তাদের কোন প্রতিনিধি না রেখে বাঙালি স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে চুক্তি সম্পাদিত হয়। হাজারও বাঙালিকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত সন্তু লারমাকে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। চুক্তির পর পরই দৃশ্যপট পাল্টাতে থাকে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আর নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে সাবেক শান্তিবাহিনীর নেতারা পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালি জনগোষ্ঠীকে ভিটে-মাটি, ঘর-বাড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে উচ্ছেদ করতে থাকে।
চুক্তির ফলে বাঙালিরা সকল ক্ষেত্রেই আজ দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। ব্যবসা-বাণিজ্য, ঠিকাদারি ও শিক্ষা শেষে চাকরি আজ বাঙালিদের কাছে সোনার হরিণ। উপজাতি ছাত্রছাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত কোটার ফলে বাংলাদেশের সকল সরকারি মেডিকেল, কারিগরি, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনায়সেই ভর্তি হতে পারছে। অথচ একই এলাকার বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র বাঙালি হওয়ার অপরাধে তাকে সমগ্র বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীদের সাথে প্র্রতিযোগিতায় উতীর্ণ হতে হচ্ছে। বাঙালিদের জন্য কোন কোটা নেই। চাকরিক্ষেত্রে কোটা সংরক্ষণতো বাঙালিদের জন্য স্বপ্নের বিষয়। অথচ উপজাতীয় সকল সম্প্রদায়ের জন্য চাকরিতে অগ্রাধিকারসহ কোটা ব্যবস্থা বিদ্যমান। উপজাতীয় সম্প্রদায় তাদের একচেটিয়া ক্ষমতার কারণে তিন পার্বত্য জেলায় সিংহ ভাগ সরকারি চাকরি তাদের সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষণ করতে পারছে। তাছাড়া দেশের সকল সরকারি চাকরিতে কোটার ভিত্তিতে অংশগ্রহণ করতে পারছে। ফলে সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যেমন মেজর জেনারেল, সচিব, রাষ্ট্রদূত, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর এবং অধ্যাপক আজ উপজাতীয় সম্প্রদায় থেকে ভূরি ভূরি হচ্ছেন। অথচ সমানসংখ্যক বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও বাঙালি সম্প্রদায় আজ শিক্ষা, চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেক পিছিয়ে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালিরা বর্তমানে চরম বৈষম্যের শিকার। মৌলিক মানবাধিকার থেকেও তারা বঞ্চিত। পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক নির্মম ও নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার। গণমাধ্যমে বাঙালিদের প্রকৃত অবস্থা উঠে আসছে না। স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবধি প্রায় ৩০ হাজার বাঙালিকে হত্যা করেছে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা। প্রায় দশ হাজার ঘর-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল, মাদরাসা, মসজিদ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রায় পাঁচ সহ¯্রাধিক বাঙালি গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। প্রায় পাঁচ হাজার বাঙালিকে নিজ ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। বর্তমানে সামান্যটুকুন জমির উপর বাড়ি নির্মাণ করে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালিদের প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য প্রয়োজন, অনুসন্ধিৎসু খোলা মন নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত বাঙালিদের স্বচক্ষে দেখা এবং তাদের প্রকৃত অবস্থা বুঝার চেষ্টা করা। অথচ বাংলাদেশসহ বিশ্ব মিডিয়ার চরম অপপ্রচারের শিকার সেখানকার বাঙালি জনগোষ্ঠী। বাঙালিরা শিক্ষার আনুপাতিক হারে নয় ভাগের এক ভাগ আর চাকরি ক্ষেত্রে তের ভাগের এক ভাগ। এরপরও বাঙালিদের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে বিষোদগার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক, বিবেকবান, সুধীমহল, সচেতন সাংবাদিকবৃন্দ, জ্ঞান বিতরণে নিবেদিত বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক; সর্বোপরি বাংলাদেশের জনসাধারণের নিকট পার্বত্য বাঙালিদের বিনীত আবেদন, মিডিয়ার অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা, বাঙালিদের প্রকৃত অবস্থা অনুধাবন করুন এবং বাঙালিদের মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ বর্তমানে দীর্ঘকাল পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করে আসা বাঙালিদের কথিত ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করার আহ্বান জানাচ্ছেন যা সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়। সচেতন মহলে আজ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বাংলাদেশের এক-দশমাংশ এলাকা পার্বত্য চট্টগগ্রাম কি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের বাইরে? পার্বত্য চট্টগ্রামে কি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রচলিত বিধি বিধান রহিত করা হয়েছে? যদি তাই না হয় তাহলে কেন আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক অনেকগুলো বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা পার্বত্য চট্টগ্রামে চালু থাকবে? বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে যেখানে দেশের প্রতিটি নাগরিক আপসহীন সেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ববিরোধী কার্যকলাপ চলতে থাকবে কেন? বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক জনগণ মনে করে পার্বত্য চট্টগ্রামের সঠিক চিত্র দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরার প্রয়োজন। বাঙালিরা মনে করে, আজ সময়ের দাবি পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সাধারণ পাহাড়ি বাঙালি জনসাধারণের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরা। দেশবাসী ও বিশ্ববিবেকের সামনে প্রকৃত সত্য তুলে ধরার প্রয়াসে সরকারের নিকট পার্বত্য বাঙালিদের বেশ কিছু দাবি রয়েছে যা বিবেচনার দাবি রাখে।
১) পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রায় ৩০ হাজার বাঙালি হত্যাসহ সকল হত্যাকা-ের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন ও খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করন।
২) শিক্ষা, চাকরিসহ সকলক্ষেত্রে উপজাতি কোটা বাতিল করে পার্বত্য কোটা চালু করা এবং ব্যবসা ক্ষেত্রে উপজাতীয়দের ন্যায় বাঙালিদেরও ইনকামট্যাক্স ও ভ্যাটমুক্ত সুযোগ প্রদান।
৩) খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা এবং উপজাতীয়দের ন্যায় বাঙালি ছাত্রছাত্রীদের জন্য ছাত্রাবাস নির্মাণ করা।
৪) দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এনজিও ও তথাকথিত পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন কর্তৃক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দুরভিসন্ধিমূলক বিভিন্ন বক্তব্য প্রচার বন্ধ করা এবং দেশপ্রেমিক নাগরিকদের নিয়ে বেসরকারিভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম রক্ষা বিষয়ক কমিটি অথবা কমিশন করা এবং সকল নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিতকরণের জন্য যৌথভাবে কাজ করা।
৫) স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুসংহত রাখা ও পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী, র্যাব ও বিজিবির ভূমিকা জোরালো করা।
৬) পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও তিনটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ সকল পদে পাহাড়ি বাঙালি নির্বিশেষে সবার সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে অবিলম্বে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
৭) বিতর্কিত ভূমি কমিশন আইন ও হ্যাডম্যান প্রথা বাতিল করে সকল নাগরিকের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করা।
৮) পাহাড়ি-বাঙালি নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কার্যকর ও সময়োপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ।
লেখক : রেজিস্ট্রার, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ঢাকা
Copyright Daily Inqilab, 2 december, 2015
No comments:
Post a Comment